বেসিক স্কিনকেয়ার শুরু করতে চাইলে সর্বপ্রথম ধাপই হল ক্লিঞ্জিং। এজন্য দরকার একটি ভালো ফেসওয়াশ। কিন্তু কেমন ফেসওয়াশ আমাদের দরকার? কিংবা ফেসওয়াশ ব্যবহারের সঠিক নিয়মটা কী? এগুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আজ থাকছে এই নিয়েই বিশদ আলোচনা।
বাজারে পাওয়া ফেসওয়াশগুলোকে আমরা মোটাদাগে দুইভাগে ভাগ করতে পারি:
- জেল বা ক্রিম বেসড ফেসওয়াশ, যেগুলোতে সাধারণত ফেনা হয়না
- ফোমিং ফেসওয়াশ, যেগুলোতে অনেক ফেনা হয়
অনেক অনেক এডভার্টাইজমেন্ট দেখে আমরা বুঝে উঠতে পারিনা কেমন ফেসওয়াশ নিবো। তবে advertisement overload মাথা থেকে সরিয়ে আমাদেরকে যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো- আমাদের স্কিন টাইপ।
ড্রাই স্কিনের জন্য ফেসওয়াশ
যদি আপনার স্কিন প্রচন্ড ড্রাই এবং ডিহাইড্রেটেড হয় তবে আপনাকে এমন একটি ফেসওয়াশ নিতে হবে যা আপনার স্কিনের ন্যাচারাল ময়েশ্চারকে নষ্ট করবেনা। সেক্ষেত্রে আপনাকে ফেসওয়াশ কেনার আগে দেখতে হবে ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্টে হায়ালুরনিক এসিড বা গ্লিসারিন এর মতো ময়েশ্চারাইজিং এজেন্ট আছে কিনা। যদি থাকে তবে ধরে নেয়া যায় সেই ফেসওয়াশটি আপনার স্কিনের ডিহাইড্রেশন আর বাড়াবেনা। ড্রাই স্কিনের জন্য ফেসওয়াশ সিলেকশনের সময় আমরা ক্রিম বেইজড বা কম ফেনা হয় (low foaming) এমন ফেসওয়াশ বেছে নিতে পারি।
এ তো গেলো ডিহাইড্রেটেড স্কিনের কথা। এবার আসা যাক তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন ফেসওয়াশ ভালো এই ব্যাপারে। অয়েলি এবং কম্বিনেশন স্কিনের মানুষরা ফোমিং বা জেল যেকোনো টেক্সচারের ফেসওয়াশ নিতে পারেন। তবে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে ফেসওয়াশটি যেন আপনার স্কিনের অয়েল একেবারে ধুয়েমুছে সাফ না করে দেয়। কারণ অয়েলি স্কিনের অধিকারীরা যদি একটি স্ট্রং সারফেক্ট্যান্টযুক্ত ফেসওয়াশ ইউজ করে ফেসের সব অয়েল ধুয়ে ফেলেন তবে আপনার স্কিনে সাময়িক সময়ের জন্য ন্যাচারাল অয়েলের ঘাটতি দেখা যাবে। এক্ষেত্রে আপনার ত্বক আরো বেশি অয়েল প্রডিউস করে, যার ফলে দেখা যায় আপনার অয়েলি স্কিন আরো বেশি অয়েলি হয়ে উঠবে এবং এতে করে পিম্পল বা বাম্পস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বহুগুণে। তাই ফেসওয়াশ বাছাইয়ে অয়েলি স্কিনের অধিকারীদেরকেও সাবধান থাকতে হবে।
ফেসওয়াশকে কীভাবে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহার করা যাবে?
অনেকের ত্বকের ব্যারিয়ার ড্যামেজড থাকে। ড্যামেজড স্কিনের জন্য দরকার সেরামাইড বা হায়ালুরনিক এসিড যুক্ত ফেসওয়াশ। এই দুই উপাদান আপনার স্কিন ব্যারিয়ারকে ধীরে ধীরে রিপেয়ার করতে সাহায্য করবে। যার ফলে আপনার স্কিন ইরিটেশন, পিম্পল হওয়া এবং অকালেই বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। আবার যাদের ত্বকে ঘন ঘন পিম্পল হওয়ার প্রবণতা আছে তাদেরকে আগে খেয়াল করতে হবে পিম্পলের ধরণ কেমন। যদি আপনার ত্বকের পিম্পলগুলো লালচে দেখতে হয় তবে আপনার দরকার একটি বেনজাইল পার অক্সাইড যুক্ত ফেসওয়াশ। আর যদি আপনার পিম্পলগুলো আপনার ত্বকের রঙের মতোই হয় তবে স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত একটি ফেসওয়াশ আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে এরকম এক্টিভ উপাদানযুক্ত ফেসওয়াশগুলো ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে। তাই এমন ফেসওয়াশ রেগুলার ফেসওয়াশের মতো ব্যবহার করা যায়না। আপনি অয়েলি স্কিনের হলে সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন এবং ড্রাই/ কম্বিনেশন বা নরমাল স্কিনের অধিকারী হলে সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন বেনজাইল পার অক্সাইড বা স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করাটা নিরাপদ।
আর রইলো রেগুলার ফেসওয়াশের কথা। আমরা অনেকেই যেনতেনভাবে ফেসওয়াশ ব্যবহার করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রেগুলার ফেসওয়াশ ব্যবহারেরও কিছু নিয়ম রয়েছে। যেমন :
- ফেসওয়াশ ব্যবহারের আগে অবশ্যই আপনাকে দুই হাত ভালোমত পরিস্কার করে নিতে হবে। নয়ত আপনার হাতে থাকা জীবাণু এবং অদৃশ্য ডার্ট আপনার ত্বককে পরিস্কার করার বদলে উল্টো কাজটা করবে।
- অবশ্যই আগে আপনার ত্বককে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। এরপর পরিমাণমত ফেসওয়াশ নিয়ে ত্বকে এপ্লাই করতে হবে।
- কমপক্ষে ৪৫ থেকে ৬০ সেকেন্ড সময় নিয়ে আপনাকে ফেসওয়াশটি ত্বকে সার্কুলার মোশনে মাসাজ করে ব্যবহার করতে হবে। তবে এক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট যুক্ত ফেসওয়াশ এর ক্ষেত্রে আপনাকে ফেসওয়াশটি ত্বকে ২ মিনিট রাখতে হবে। ফেসওয়াশটি চোখের সংস্পর্শে যেন না আসে তা লক্ষ্য রাখা জরুরি। এরপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- রাতে ফেসওয়াশ ইউজ করার ক্ষেত্রে আগে দাঁত ব্রাশ করে তারপর ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে।
ফেসওয়াশ দিনে কয় বার ব্যবহার করতে হবে?
আপনার ত্বক যদি প্রচন্ড অয়েলি বা একনেপ্রোণ হয় তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে একবার এবং ডাবল ক্লিঞ্জিংয়ের সময় একবার ব্যবহারই যথেষ্ট। যদি স্কিন প্রচন্ড ড্রাই হয় তবে সকালে ফেসওয়াশ ব্যবহার না করাই ভালো। তবে কোনমতেই দিনে ৩ বারের বেশি ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে করে আপনার ত্বকের ময়েশ্চার ব্যারিয়ার এবং ন্যাচারাল অয়েল প্রোডাকশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং স্কিনে বয়সের ছাপ তাড়াতাড়ি পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।